Posts

রাষ্ট্রকূট রাজবংশ

অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগে চালুক্য শক্তির পতনের পর দক্ষিণ ভারতে রাষ্ট্রকূটদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রকূটরা প্রায় দুই শতাব্দী ধরে (৭৫৩-৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ) দাক্ষিণাত্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আধিপত্য বজায় রেখেছিল। তাঁদের সাম্রাজ্য আধুনিক ভারতের সমগ্র কর্ণাটক রাজ্য বিস্তৃত ছিল এবং তামিলনাড়ু, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাটের কিছু অংশকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। ◇ রাষ্ট্রকূটদের উৎপত্তি [ Origin of Rashtrakutas] রাষ্ট্রকূটদের উৎপত্তি বা আদি বাসস্থান সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। (১) নবম শতাব্দীর একটি রাষ্ট্রকূট অনুশাসন লিপিতে তাঁদের মহাভারতের বিখ্যাত যদু-বংশীয় বীর সাত্যকির বংশধর বলে বর্ণনা করা হয়েছে। রাষ্ট্রকূট রাজাদের সভাকবিরা রাষ্ট্রকূট-রাজ তৃতীয় গোবিন্দকে ভগবান কৃষ্ণ বলে বর্ণনা করেছেন। (২) অনেকের মতে, সম্রাট অশোকের শিলালিপিতে বর্ণিত রথিক বা রাষ্ট্রীকরা হল রাষ্ট্রকূটদের পূর্বপুরুষ। (৩) বার্নেলের মতে, রাষ্ট্রকূটরা ছিল অন্ধ্রদেশের তেলেগু রেড্ডি বা কৃষক সম্প্রদায়ভুক্ত। (৪) অনন্ত আলতেকরের মতে, রাষ্ট্রকূটরা ছিলেন কর্ণাটকের অধিবাসী এবং তাঁদের মাতৃভাষা ছিল কানাড়ি। (৫) ...

উড্রো উইলসনের চোদ্দো দফা নীতি

১৯১৮ সালে, যখন মিত্রশক্তি বুঝতে পারে যে জার্মানির পতন আসন্ন, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ১৯১৮ সালের ৮ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেসের সামনে তাঁর চৌদ্দ দফা শর্ত (Fourteen Points) ঘোষণা করেন। তাঁর পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে স্থায়ী শান্তির জন্য লীগ অব নেশনস বা জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করা এবং আন্তর্জাতিক বিরোধের স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা। এক জাতি ও এক রাষ্ট্র ছিল চৌদ্দ দফার মূল সূত্র। চৌদ্দ দফার শর্তসমূহ গোপন কূটনীতির বদলে শান্তি চুক্তির শর্তাবলি খোলাখুলিভাবে আলোচনা করা হবে। নিরপেক্ষ দেশের জাহাজ মহাসমুদ্রে চলাচলের অবাধ অধিকার স্বীকার করা হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সকল দেশের অবাধ অধিকার থাকবে। প্রতিটি দেশের অস্ত্র হ্রাস করে যুদ্ধের সম্ভাবনা দূর করতে হবে। উপনিবেশগুলির ওপর বিভিন্ন দেশের দাবী স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিচার করা হবে। রাশিয়ার অধিকৃত স্থানগুলি রাশিয়াকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। বেলজিয়ামের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা পুনঃস্থাপন করা হবে। ঐতিহাসিক ন্যায়বিচারের জন্য ফ্রান্সকে আলসাস ও লোরেন ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ইতালি...

হিটলার কিভাবে জার্মানির রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরাজয়ের পর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে ভাইমার প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জনগণের সমর্থনে ভাইমার সরকারের শাসনকার্য চলতে থাকে। কিন্তু ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে আমেরিকা জার্মানিকে অর্থসাহায্য বন্ধ করে দেয়। ফলে, জার্মানিতে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে অর্থনৈতিক বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করে। এই সময় জার্মান জাতির মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে হিটলার ও তাঁর ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট পার্টি (Nazi) জার্মানির রাজনীতিক্ষেত্রে প্রবেশ করে। জার্মান ভাইমার প্রজাতন্ত্রের দুর্বলতাই হিটলারের অভ্যুত্থানের পথ উন্মুক্ত করে। হিটলারের বাল্যজীবন ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার এক সাধারণ চর্মকারের ঘরে এডলফ হিটলার জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন অস্ট্রিয়ার শুল্ক বিভাগের একজন সাধারণ কর্মচারী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জার্মান নাগরিক না হয়েও তিনি জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং সৈনিক হিসাবে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয় তাঁকে গভীর শোকে নিমগ্ন করে এবং তাঁর মনে হতাশার সৃষ্টি হয়। এই সময়েই তিনি রাজনীতিকের পেশা অবলম্বন ক...

পশ্চিমবঙ্গের পৌরসভার গঠন ও কার্যাবলী

পশ্চিমবঙ্গের পৌরসভাগুলি (Municipality of West Bengal) স্থানীয় শাসন ও প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা প্রদান, অবকাঠামো উন্নয়ন, এবং তাদের নিজ নিজ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দায়ী। এখানে পশ্চিমবঙ্গের পৌরসভার গঠন এবং ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করা হল। পশ্চিমবঙ্গের পৌরসভার গঠন ছোটো শহরগুলির স্বায়ত্তশাসন পৌরসভার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা, চন্দননগর, হাওড়া, আসানসোল, দুর্গাপুর, বিধাননগর ও শিলিগুড়ি—এই সাতটি বড়ো শহর ছাড়া অন্য শহরগুলির স্বায়ত্তশাসন পরিচালনার ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলিকে দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার শ্রেণীবিভাগ: পশ্চিমবঙ্গ পৌর আইন (১৯৯৪) অনুযায়ী পৌরসভাগুলিকে ক, খ, গ, ঘ, ঙ—এই পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। দু-লক্ষ বা তার অধিক অধিবাসী নিয়ে 'ক' শ্রেণির, দেড় লক্ষ থেকে অনধিক দু-লক্ষ অধিবাসী নিয়ে 'খ' শ্রেণির, পঁচাত্তর হাজার থেকে অনধিক দেড় লক্ষ অধিবাসী নিয়ে 'গ' শ্রেণির, পঁচিশ হাজার থেকে অনধিক পঁচাত্তর হাজার অধিবাসী নিয়ে 'ঘ' শ্রেণির এবং অনধিক পঁচিশ হাজার অধিবাসী নিয়ে 'ঙ' শ্রেণি...

খেন রাজবংশ

খেন রাজবংশ (Khen dynasty) ছিল আদি মধ্যযুগে কামরূপ (আসাম) রাজ্যের একটি রাজবংশ। পাল রাজাদের পতনের পর 'খেন' বা 'কেন' নামে পরিচিত আদিম অধিবাসীদের একজন সর্দার কামরূপ রাজ্যের রাজা হয়েছিলেন। খেন রাজবংশের রাজধানী ছিল ধরলা নদীর বাম তীরে অবস্থিত কামতাপুর বা গোসানীমারী (বর্তমানে কোচবিহার জেলায়)। খেন রাজবংশের উত্থান খেনরা কোন্‌ জাতি ছিল, তা জানার কোনও নির্দিষ্ট উপায় নেই। খেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নীলধবজ (১৪৪০-১৪৬০ খ্রিঃ)। তিনি প্রথমে এক ব্রাহ্মণের বাড়িতে রাখালের কাজ করতেন। কামতা রাজ্যের শেষ রাজা মৃগাঙ্ককে (১৪১৫-১৪৪০ খ্রিঃ) সিংহাসনচ্যুত করার ক্ষেত্রে ওই ব্রাহ্মণ বিশেষ সাহায্য করেছিলেন। খেন সর্দার 'নীলধ্বজ' নামে হিন্দু উপাধি গ্রহণ করে কামরূপের রাজা হন এবং তাঁর প্রাক্তন মনিব ব্রাহ্মণকে প্রধানমন্ত্রীর পদে নিয়োগ করেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর গোসানি মঙ্গল কাব্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে কান্তনাথ নামে এক বালকই খেন শাসক নীলধ্বজ হয়েছিলেন। নীলধ্বজের পরে তাঁর পুত্র চক্রধ্বজ (১৪৬০-১৪৮০ খ্রিঃ) সিংহাসন লাভ করেন। চক্রধ্বজের পরে তাঁর পুত্র নীলাম্বর (১৪৮০-১৪৯৮ খ্রিঃ) রাজা হন। নীলাম্বর ছ...